বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব [Banggobondhu Sateline And it's Economic Important]
১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মহাকাশজয়ের সূচনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ (BS-1) বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ। এটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হবে। স্যাটেলাইট-টির উৎক্ষেপণ তারিখ-১০ মে, ২০১৮ (পরিকল্পিত), উৎক্ষেপণ রকেট-ফ্যালকন ৯ ফুল থ্রাস্ট, উৎহ্মেপণ স্থান-কেনেডি স্পেস সেন্টার লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯, কন্ট্রাক্টর-স্পেস এক্স, মিশনের সময়কাল-১৫ বছর ধরা হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা এই স্যাটেলাইট-টি ফ্রান্সের থালস অ্যালেনিয়া স্পেস কর্তৃক নকশা ও তৈরি করা হয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশযান সংস্থা স্পেস এক্স থেকে উৎক্ষেপণ করার জন্য অপেক্ষা করছে। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ এবং তা কক্ষপথে রাখার জন্য রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়। মহাকাশে এই কক্ষপথের অবস্থান ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে।
১৫ বছর আয়ুষ্কাল বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে গেলে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পরিচালনা, সফল ব্যবহার ও বাণিজ্যিক কার্যত্রমের জন্য ইতিমধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। নতুন এই কোম্পানিতে কারিগরী লোকবল নিয়োগ এবং তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে প্রাথমিক এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দ্বিতীয় গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণ কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার (২৬ কু-ব্যান্ড এবং ১৪ সি-ব্যান্ড) রয়েছে। এরমধ্যে ২০টি দেশে ব্যবহারের জন্য এবং ২০টি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মূদ্রা আয় সম্ভব। এছাড়া নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকায় বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে।
#অর্থনৈতিক_গুরুত্ব
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সফল হওয়ার পর কক্ষপথে গিয়ে কার্যকর হয়েছে কিনা বুঝতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে। সব কিছু সফল হলে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) সেবা, স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সম্প্রচার এবং ইন্টারনেট সুবিধাসহ ৪০ টি সেবা দিতে পারবে। দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রির মাধ্যমে বছরে দেশের টাকা দেশেই থাকবে, বিদেশি নির্ভরতা কমবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ট্যারিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল রাখবে, দেশের দুর্গম দ্বীপ, নদী ও হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা চালুও সম্ভব হবে।
টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-গবেষণা, ভিডিও কনফারেন্স, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট সংস্থা বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ খাতে ব্যয় করছে বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যাত্রা শুরু করলে এই বিপুল অর্থ দেশেই থেকে যাবে। স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেমন নির্ভরতা কমবে অন্য দেশের ওপর, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
©Zenith Alom
Assistant Accountant General (AAG)
BCS Audit & Accounts (Rec.)
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব [Banggobondhu Satelite And it's Economic Important]
Reviewed by studynotebd
on
May 10, 2018
Rating:
No comments: