বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট
বঙ্গবন্ধু-১
স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ
করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আধুনিক বিশ্বের বেশীরভাগ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নিজস্ব
স্যাটেলাইট রয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশে যোগাযোগ
ও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এটির মাধ্যমে বাংলাদেশ
নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারি হবে যা স্যাটেলাইটের জন্য অন্য রাষ্ট্রের উপর
নির্ভরশীলতা হ্রাস করবে। ২০২১ সালের মধ্যে অর্থাৎ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের
লগ্নে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশে
রুপান্তরিত করার যে প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে
উল্লেখ করেছিল, এই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে তারা তথ্য প্রযুক্তিতে ডিজিটাল
বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্য পূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
পটভূমি
এই স্যাটেলাইট প্রোজেক্ট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে
প্রথমেই ২০০৮ সালে বিটিআরসি একটি কমিটি গঠন করে যা ২০১০
সালে পুনর্গঠিত হয়। এই কমিটির মূল কাজ ছিল স্যাটেলাইট
প্রোজেক্ট বাস্তবায়নে ITU এর
প্রয়োজনীয় নিয়ম নীতি
গুলো অনুসরণ
করা। প্রাথমিক ভাবে এই প্রোজেক্ট বাস্তবায়নে USA ভিত্তিক consultant
firm “ space Partnership International”ও ITU এর বিশেষজ্ঞগনের মতামত নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে “Preparatory
function and Supervision in Launching a Communication and Broadcasting
Satellite” নামক একটি প্রকল্প গ্রহন করে তারা। কক্ষপথ সংক্রান্ত
কার্যাবলী সম্পাদন কারি প্রতিষ্ঠান এসপিআই কে নিযুক্ত করা হয় আইটিইউ এর সাথে জরুরি
প্রক্রিয়া গুলো সম্পাদনের জন্য।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প
১৫ জানুয়ারী
২০১৫ তারিখে বাংলাদেশ ইন্টারস্পুটনিক নামক রাশিয়ান উপগ্রহ কোম্পানির সাথে ১১৯.১০ দ্রাঘিমার
অরবিটাল স্লট কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ স্লট কেনা হয় ২ কোটি ৮০ লাখ
মার্কিন ডলারে যা প্রায় ২১৯ কোটি টাকার সম পরিমান। চুক্তি অনুসারে স্লটটি ১৫ বছরের
জন্য কেনা হয়েছে তবে মেয়াদ শেষ হবার পরে আরও দুবার চুক্তির মেয়াদ বারাবার সুযোগ রয়েছে
(সুত্রঃ প্রথম আলো ১৫ জানুয়ারী ২০১৫)। স্যাটেলাইটটি
উৎক্ষেপণের দায়িত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি
কোম্পানি Space X এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে এর নির্মাতা কোম্পানি
ফ্রান্সের থ্যালাস এলানিয়া। বিটিআরসি সম্পাদিত ২০১৫ সালের চুক্তি অনুসারে এই
কোম্পানিটি স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণে কাজ করবে। এ প্রকল্পের সার্বিক খরচ পরবে
২৯৭৬ কোটি টাকা (সুত্রঃ The Daily Star ২৯ নভেম্বর ২০১৭)।
এই
স্যাটেলাইটটি মুলতঃ যোগাযোগ ও ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইট। এর ৪০ টি ট্রান্সপণ্ডার রয়েছে
যার ২৬ টি কে ইউ ব্রান্ডের ও ১৪ টি সি ব্রান্ডের। ২০ টি ট্রান্সপণ্ডার বাংলাদেশকে
সার্ভিস দেবার জন্য ব্যবহারিত হবে এবং ২০ টি বিদেশি কোন কোম্পানির কাছে বিক্রয় করা
হবে।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ
গাজীপুরের
প্রায় ১৩ একর জায়গা থেকে প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রন
কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর উৎক্ষেপণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান Space X যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে এটি উৎক্ষেপণ
করবে। প্রাথমিক ভাবে এটি ২০১৭ সালের বিজয় দিবসের লগ্নে উৎক্ষেপণের আশা করা হলেও
পরবর্তীতে তারিখটি ২০১৮ এর মার্চ মাসে নির্ধারণ করা হয়। তবে এর মধ্যে হ্যারিকেন
ইরমার আঘাতে উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে নির্ধারিত নতুন তারিখ ২০১৮ সালের ২৪
এপ্রিলে এটি উৎক্ষেপণের আশা করা যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির উৎক্ষেপণের
উদ্বোধন করবেন। সঠিকভাবে উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হলে এটি ৮ দিন পরে ১১৯.১ পূর্ব
দ্রাঘিমাংশে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশকিভাবে লাভবান হবেঃ
আশা করা
যাচ্ছে এই স্যাটেলাইটটি দক্ষিন এশিয়ার দেশ সমুহ যেমন ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন,
তুরকেমেনিস্তান, কিগিজিস্তান, এবং তাজিকিস্তানে সেবা প্রদান করবে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিদেশি অপারেটরদের থেকে ব্যান্ডউইডথ
ভাড়া করে বছরে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। এই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের ফলে এই
বিপুল পরিমানের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। দেশের প্রায় ৩৭ টি টিভি চ্যানেলের কাছে ফ্রিকুয়েন্সি
বিক্রির মাধ্যমে ১২৫ কোটি ডলার আয় হবে এবং এসব টিভি
চ্যানেল এখনকার প্রচলিত ক্যাবল ভিত্তিক প্রচারের পরিবর্তে
ছোট ডিশ এন্টেনার ডিরেকট মাধ্যমে সিগন্যাল পাবে।
এই স্যাটেলাইটটি দুর্যোগ প্রবণ এলাকার তথ্য আদান প্রদানে
সক্ষম হবে। এর ২০ টি ট্রান্সপণ্ডার বিক্রির এবং ভাড়া
দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম
হবে। সর্বোপরি, একটি নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বে
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং স্যাটেলাইটের
জন্য অন্যদেশের উপর নির্ভর হতে হবেনা।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট
Reviewed by studynotebd
on
April 30, 2018
Rating:
No comments: